নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জে শিবগঞ্জ উপজেলার দাইপুকুরিয়া ইউনিয়নের কর্ণখালী গ্রামে কেঁচো সার তৈরি ও বিক্রি করে সুমাইয়া আক্তার বেবি এখন স্বাবলম্বী। অভাবের সংসারে এখন যেন সুখের হাতছানি। সন্তানেরা পেটপুরে দু বেলা দুটো খেতে পারে ও ভালো জামাকাপড় পরে। আনন্দে কাটছে তার সংসার।
তার উৎপাদিত কেঁচো সারের গুণগত মান ভালো হওয়ায় স্থানীয় পর্যায়ে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক চাহিদা। এ কেঁচো সার বিক্রি করেই তিনি আজ এগিয়ে যাচ্ছেন নিজের লক্ষ্যের দিকে। পাশাপাশি এ সার উৎপাদনে তিনি হয়ে উঠছেন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব।
তবে কিছু সাহস বা উৎসাহ সম্পর্কে কে তাকে উদ্বুদ্ধ করেছে জানতে চাইলে বেবি জানান, আমাকে শিবগঞ্জ শাহাবাজপুর গ্রাম ও বাংলাদেশ ভার্মীকম্পোষ্ট উৎপাদক এ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাঃ সানাউল্লাহ সুমন ভাই অনুপ্রেরণা দিয়েছে। মনে মনে ইচ্ছা পোষণ করেন, কেঁচো চাষের পদ্ধতি হাতে-কলমে শেখেছি।
সুমাইয়া আক্তার বেবি আরো বলেন, স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেছি বর্তমানে একটি কেজি স্কুলে শিক্ষতকতা করছি। কিন্তু কিছু একটা করার ইচ্ছা সবসময় আমাকে তাড়িয়ে বেড়াত। তা থেকে বাড়িতেই কেঁচো খামার গড়ে তুলি। এখন কেঁচো চাষ করছি। তবে কেঁচো সার তৈরির প্রধান উপকরণ গোবর। তবে নিজ বাড়িতিই গরু রয়েছে। যার ফলে কেঁচো চাষ আমার জন্য আরো সহজতর হয়।
খামারে গরুগুলো সবসময় বাঁধা থাকে। সেখানে গরুগুলোকে পরিচর্যা করা হয়। কেঁচো সার তৈরিতে প্রথমে গোবরকে বালু ও আবর্জনা মুক্ত করেন। এরপর একটি প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে মুখ বেঁধে ১০ থেকে ১২ দিন ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে দেন। কারণ এ সময়ের মধ্যে গোবর থেকে গ্যাস বেরিয়ে যায় এবং কালচে রং ধারণ করে। এরপর সেগুলো পলিথিনের বস্তার ওপর ঢেলে রিফাইন করে বা পানি দিয়ে হালকা নরম করে ডাবরে রাখা হয়। সেখানে কেঁচো ছেড়ে দিয়ে ছায়াযুক্ত স্থানে রাখা হয়।
এভাবেই শুরু হয় সার তৈরির প্রক্রিয়া। কেঁচোর পরিমাণ বেশি হলে ১২ থেকে ১৫ দিন, আর যদি পরিমাণ কম হয়, তাহলে ১৮ থেকে ২০ দিনের মতো সময় লাগে সার তৈরি করতে। বর্তমানে দুটি বড় এবং তিনটি মাঝারি আকারের ডাবরে কেঁচো সার তৈরি করেন তিনি। আলাদা করে তাকে আর কেঁচো কিনতে হয় না। গোবরের মধ্যে কেঁচো ডিম দেয় এবং সেখান থেকেই কেঁচো জন্মে। আর এ সারগুলো তিনি নিজের কাজেই ব্যবহার করেন। যেমন বেগুন, লাউ, আদা, হলুদ, শিম, মরিচ চাষে এবং নারিকেল গাছের গোড়ায় ব্যবহার করেন। বাড়তিটুকু বিক্রি করেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৪ লক্ষ টাকার কেঁচোর সার বিক্রি করেছেন তিনি।
আরও প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো বিক্রি করবেন। প্রতি কেজি কেঁচো সারের দাম নেন ১০/১২ টাকা। প্রতিবেশীরাই তার ক্রেতা। তার এ পদ্ধতি দেখে এখন অনেকেই কেঁচো সার তৈরিতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। জমিতে ফসলের ভালো ফলনের জন্য এটি খুবই উপকারী। কেঁচো চাষ করে এখন তিনি বেশ স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।
এ কাজে কোনো বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কি না,এ প্রসঙ্গে বলেন, যখন কেঁচো চাষ শুরু করি, তখন বাড়ির অনেকেই বাধা দিয়েছেন। কিন্তু আমি দমে যাইনি। নিজের চেষ্টায় কেঁচো চাষে এগিয়ে চলেছি। সবজির ফলন ভালো হওয়ায় এখন আর কেউ বাধা দেয় না। আমার বাবা, মা, ভাই ও বোন এখন কেঁচো চাষে আগ্রহী হয়েছেন।
কেঁচো চাষ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে সুমাইয়া আক্তার বেবি জানান, আরও বড় পরিসরে কেঁচো চাষ করার ইচ্ছা আছে। সেক্ষেত্রে আর্থিক সহযোগিতাসহ জায়গার দরকার তবে সরকারী ভাবে সাহয্য পেলে আমার উদ্যেত্তা তৈরিতে সাহায্য করবে।
তিনি আরো বলেন, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যমে রাসায়নিক সার বর্জন, বেকারত্ব দূরীকরণ, জমিতে জৈব পদার্থের ঘাঠতি পূরন, লেখা পড়ার পাশাপাশি এই কাজটি খুব সহজে করা যায়, বাবা অথবা স্বামী কারো কাছে হাত পেতে টাকা চাওয়া লাগে না। তার খামারে কেঁচো সার করে বছরে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা আয় করছি। বর্তমানে তার নিজস্ব গাভী থাকায়। এখন কেঁচো সার তৈরির জন্য তাকে অন্য বাড়ি থেকে গোবর সংগ্রহ করতে হয় না। এমনকি বায়োগ্যাসের মাধ্যমে বাড়িতে রান্নার কাজে ব্যাবহার হয় আমার প্ররিবারের ৮ জন গ্যাসে রান্না করেও গ্যাস শেষ হয় না বরং ছেড়ে দিতে হয়। কেঁচো সার উৎপাদনের পাশাপাশি বাড়তি সুবিধা গ্যাসের রান্না পাওয়া যায়।
বিধায় তিনি এখন স্বাবলম্বী। এমন কি তিনি বাংলাদেশ ভার্মীকম্পোষ্ট উৎপাদক এ্যাসোসিয়েশনের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক।
Leave a Reply