আজ ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রাক প্রাথমিক শিক্ষাঃ আত্নপ্রত্যয়ী ও সৃজনশীল ছাত্রসমাজ গঠনের পথিকৃৎ-দৈনিক বাংলার নিউজ

এস এম হাবিবুল হাসান
উপজেলা নির্বাহী অফিসার, আক্কেলপুর,জয়পুরহাট।

নিরেন দাস,জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ-

শিক্ষার গুরুত্ব এবং সুদূর প্রসারী প্রভাব আজ দেশীয় ও আর্ন্তজাতিকভাবে স্বীকৃত। প্রাথমিক শিক্ষায় শিশুদের অর্ন্তভূক্তি, অবস্থান এবং স্কুল থেকে ঝরে পড়া রোধে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা শিশুদের মানসিক উন্নয়ন ও আচরণগত পরিবর্তন এনে তাদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা গ্রহণকে উৎসাহিত করছে এবং শিক্ষার বৃহত্তর পরিমন্ডলে প্রবেশের পথকে সহজ করে তুলছে।

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার বয়স কত?

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বা প্রি-স্কুল হলো আনুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষার পূর্ববর্তী এক বছর মেয়াদি শিক্ষাস্তর যেখানে শিশুর সার্বিক বিকাশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় শিশুর স্বতঃস্ফুর্ত অভিষেক ঘটানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা মূলত ৫-৬ বছর বয়সী শিশুদের শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, ভাষাগত ও সামাজিক বিকাশের মজবুত ভিত্তি তৈরি করে থাকে। এই ভিত্তি শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য
আনন্দময় ও শিশুবান্ধব পরিবেশে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার বয়সী শিশুদের (৫+ বছর) বয়স ও সামর্থ্য অনুযায়ী শারীরিক, মানসিক, আবেগিক, সামাজিক, নান্দনিক, বুদ্ধিবৃত্তীয় ও ভাষাবৃত্তীয় তথা সার্বিক বিকাশে সহায়তা দিয়ে আজীবন শিখনের ভিত্তি রচনা করা এবং প্রাথমিক শিক্ষার অঙ্গনে তাদের সানন্দ ও স্বতঃস্ফুর্ত অভিষেক ঘটানো।

গবেষণায় দেখা গেছে, দূর্গম ও অনগ্রসর সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকে বেশ উৎসাহব্যঞ্জক এবং আনন্দের সাথে গ্রহণ করছে। প্রাক-প্রথমিক শিক্ষা একটি শিশুর মানসিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করে সার্বিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
এ সকল বিষয় পর্যালোচনা, বিচার বিশ্লেষণ করেই জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে এক বছরের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। সরকারের প্রাক-শিক্ষার ​​​​​​​গুরুত্ব এবং ইতিবাচক ফলাফলকে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার প্রস্তুতিমূলক ভিতকে সুদৃঢ করবে।

প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষায় অংশীদারীত্বমূলক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকে ‘সকলের জন্য শিক্ষা’ আন্দোলনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতিও দেয়া হয়েছে। প্রায় ৯০ শতাংশ ৩ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুরা প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। যদিও সরকার ৫-৬ বছরের শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে উন্নতমানের শিক্ষা নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে, শিশুদের জন্য মানসম্মত শিক্ষার বিষয়টি সরকারের কাছে একটি চ্যালেঞ্জ।
বর্তমানে ৫ থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রস্তুতিমূলক এক বছর মেয়াদী শিক্ষা কার্যক্রম প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বিপুল সংখ্যাক বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য

ক) আনন্দময় ও শিশুবান্ধব পরিবেশে বিভিন্ন খেলা ও কাজের মাধ্যমে শিশুর সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা;

খ) শেখার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করা;

গ) শিশুর সৌন্দর্য, নান্দনিকতাবোধ ও সুকুমারবৃত্তি বিকাশে সহায়তা করা;

ঘ) শিশুকে পারিবারিক, সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করা;

ঙ) নিজস্ব সাংস্কৃতিক আচার, কৃষ্টি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয়ের পাশাপাশি এর চর্চায় উৎসাহিত করা;

চ) নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সামাজিক রীতিনীতি বিকাশে সহায়তা করা;

ছ) শিশুর চলনশক্তির বিকাশে সহায়তা করা;

জ) স্বাস্থ্য সচেতনতা ও নিরাপত্তা বিধানে সহায়তা করা;

ঝ) শিশুর ভাষা ও যোগাযোগ দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করা;

ঞ) প্রারম্ভিক গাণিতিক ধারণা, যৌক্তিক চিন্তা ও সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা অর্জনে সহায়তা করা;

ট) পরিবেশের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কারণ ও ফলাফল সম্পর্ক অনুধাবনে সহায়তা করা;

ঠ) শিশুর স্বতঃস্ফুর্ত কল্পনা, সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তি বিকাশে সহায়তা করা;

ড) শিশুর আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা বিকাশে সহায়তা করা এবং নিজের কাজ নিজে করতে উদ্বুদ্ধ করা;

ঢ) আবেগ বুঝতে পারা ও তার যথাযথ প্রকাশে সহায়তা করা;

ণ) শিশুকে পারস্পরিক সমঝোতা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও ভাগাভাগি করতে সহায়তা ও উদ্বুদ্ধ করা;

ত) শিশুকে প্রশ্ন করতে আগ্রহী করে তোলা ও মতামত প্রকাশে উৎসাহিত করা;

থ) শিশুকে বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তোলা।

দ) শৈশবে শিশুর অসংযত ও বিশৃঙ্খল আচরণে সংযত ও সুশৃঙ্খল করে গড়ে তোলা এই শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্দেশ্য।

ধ) এই শিক্ষার অপর গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল শিশুর আত্মসক্রিয়তা ও আত্মপ্রচেষ্টার উপর গুরুত্ব দিয়ে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলা।

ন) এই বয়সের শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য নানা ধরনের ছবি আঁকা, গান, গল্প বলা, কবিতা বলা ইত্যাদি বিষয়ের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

প) ছোট্ট শিশুরা সবকিছু জানতে চায়। তারা চারপাশের পরিবেশ, ঘটনা সম্পর্কে নানা প্রশ্ন করে। তাদের মনে নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে অদম্য কৌতূহল। প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হল শিশুর মধ্যে নতুন নতুন আগ্রহ সৃষ্টি করা।

ফ) কোঠারি কমিশন বলেছে, প্রত্যেক শিশু যাতে স্বাধীনভাবে তার ইচ্ছা ও আগ্রহ অনুযায়ী নিজের স্বত্তাকে বিকশিত করতে পারে তা দেখাই প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য। সৃজনাত্মক কাজের মধ্যে ছবি আঁকা, আর্ট অ্যান্ড ক্রাফটের কাজ, ছড়া গান, অঙ্গসজ্জা লোনের মাধ্যমে কবিতা বলা ইত্যাদি।

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com