নিজস্ব প্রতিবেদক : সমাজে অনেক লোক আছেন যারা কষ্টেও মানুষের কাছে হাত পাতেন না, তাদের তালিকা করে খাবার পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে এ নির্দেশনা দেন তিনি। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের জেলাসমূহের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় করছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ সামাজিক সুরক্ষার আওতায় সহযোগিতা পাচ্ছেন, তাদের পাশাপাশি একটি তালিকা করতে হবে। যারা কষ্টেও মানুষের কাছে হাত পাতেন না, মুখ বুঝে ঘরে বসে থাকেন তাদের।’
তিনি বলেন, ‘সমাজে অনেক লোক আছেন যারা কর্ম করে জীবন-জীবিকা করতেন। এদের অনেকেই আজ কষ্টে আছেন। তারা হাত পাততে আসবেন না। চাইতে পারবেন না। তাকে মুখ বুঝে কষ্ট সহ্য করতে হবে। তারা যেন কষ্টে না থাকে তাদের বাড়িতে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিতে হবে।’
প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংস্থাদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবাই মিলে একটা তালিকা করবেন। যার সত্যিকার অভাব রয়েছে, কষ্ট পাচ্ছে তাদের তালিকা যেন হয়। তাদের কাছে যেন খাবার পৌঁছায়। আমি জোর নিয়ে বলছি, যারা এ ধরনের কষ্টের মধ্যে আছেন কিন্তু ঘর থেকে বের হচ্ছেন না, তাদের জন্য একটা তালিকা করে ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেবেন। যাতে বাচ্চা শিশুরা কষ্ট না পায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোপূর্বে এ বিষয়ে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছি। তার সঙ্গে এটাও জোর দিতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী প্রলয় সৃষ্টি করেছে। এটা এমনভাবে বিস্তার লাভ করছে যে, এই ভাইরাসটি মহাবিপর্যয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্বব্যাপী। এটা একটা অঙ্কের মতো বাড়ে।’
তিনি বলেন, এটা দেখে ভয় পেলে চলবে না। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এটা শুধু আমাদের দেশে নয় সারাবিশ্বেই ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোগ হলে লুকাবেন না। রোগ কার কখন হচ্ছে কেউ বলতে পারে না। আজ যিনি একজনকে ঘৃণার চোখে দেখবেন আগামীকাল সেই আক্রান্ত হতে পারেন। তখন আপনার কী হবে সেটাও আপনাকে ভাবতে হবে। তারপরও আমি দেখেছি রোগ হলে অনেকে বলতে লজ্জা পাচ্ছে, যে অন্যারা হয়তো তাদের অবহেলা করবে, করুণার চোখে দেখবে। এই মানসিকতা সম্পূর্ণরূপে পরিহার করতে হবে।
তিনি বলেন, মানুষের জন্যই মানুষ, মানবতা নিয়েই সবাইকে এগুতে হবে। কাজেই আপনারা সেই মানসিকতা নিয়েই চলুন দেশবাসীর নিকট এটাই আমার আহ্বান। কারণ আমরা বাঙালি সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে দেশ স্বধীন করেছি। কাজেই ঐক্যের একটা মূল্য আছে, ত্যাগের একটা মূল্য আছে। সে কথাটা মনে রেখে আপনারা কাজ করবেন।
তিনি আরো বলেন, যখন এ রোগের প্রাদুর্ভাবটা বাড়তে শুরু করে তখনই জানুয়ারি মাসে আমরা ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছিলাম। তবে ধীরে ধীরে এটা বাড়তে শুরু করল, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকার যথাযথভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। তার ফলে অন্যান্য দেশে এটা যেভাবে ব্যাপকভাবে সংক্রমিত হয়েছে বাংলাদেশে সেটা হয় নাই। স্বাস্থ্য পরিস্থিতিও সম্পূর্ণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসেই এটা সম্ভাব হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছে না, কাজ করে খেতে পারছে না, জীবন-জীবিকার পথ অনেকটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো। যারা চাকরিজীবী বা বেতন পাচ্ছেন, তাদের কথা আলাদা। প্রতিদিন যারা দিন আনি দিন খাই, সেই ধরনের ছোটখাট ব্যবসা-বাণিজ্য করে যারা খেত, সামান্য কিছু টাকা উপার্জন করত, তাদের কাজ বন্ধ হয়ে আছে। এভাবে বহু লোককে কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। আমাদের সাধ্যমতো আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা ১০ টাকায় চাল বিতরণের ব্যবস্থা করেছি। আমরা বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। সেই ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি। আমাদের সামাজিক সুরক্ষামূলক যে কাজগুলো, বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, প্রতিবন্ধীভাতাসহ- এমন ভাতাগুলো অব্যাহত থাকবে। ১০ টাকার চালের যে রেশনকার্ড আছে, সেটাও অব্যাহত থাকবে। এর বাইরে যারা হয়তো ভাতাপ্রাপ্ত না কিংবা যারা অনুদান নেবে না, কিন্তু তারা কিনে খেতে চায়, তাদের জন্য চালের ব্যবস্থা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘যারা দৈনন্দিন কাজ করে খেত, এখন সেই উপায় বন্ধ হয়ে গেছে, তাদের খুঁজে বের করে তালিকা করতে হবে। আমার অফিস থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে এবং দুর্যোগ মন্ত্রণালয়কেও নির্দেশ দিতে হবে। যারা এ ধরনের একেবারে নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্তের মধ্যে পড়ে, তাদেরও ১০ টাকা কেজি চালের রেশনকার্ড করে দিতে হবে।’
কীভাবে দেয়া হবে তা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু আমরা যদি রেন্ডমলি দিতে থাকি, আমাদের কিছু মানুষের এত অভ্যাস খারাপ আছে, দেখা যাবে এগুলো কিনে নিয়ে নয়-ছয় করে ফেলেছে। ঠিক সুনির্দিষ্ট লোকটার কাছে পৌঁছাচ্ছে না। এখন যদি তাদের জন্য কার্ড তৈরি করে দিই, সবারই আইডি কার্ড (জাতীয় পরিচয়পত্র) আছে। আমরা যদি কার্ড করে দিই, কার্ডের মাধ্যমেই সকলের কাছে আমরা স্বল্পমূল্যে খাদ্য পৌঁছে দিতে পারব। যে তালিকাটা থাকলে সুবিধা হবে যে, তাদের আমরা জানতে পারব এবং সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছে দিতে পারব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারাবিশ্বে যুদ্ধ হয় বড় বড় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে, এখানে সামান্য একটা করোনাভাইরাস, যা কেউ চোখে দেখছে না। কারো চোখে পড়েনি যে জিনিসটা কী? কিন্তু সে এতই শক্তিশালী যে, সমস্ত বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে। সমস্ত বিশ্বই এখন বলতে গেলে স্থবির।’
তিনি বলেন, ‘ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি, অথবা যারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মনে করত বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিধর, কথায়-কথায় বোম্বিং করত, কথায় কথায় গুলি করছে, কথায় কথায় মারছে। কোথায় গেল সেই শক্তি, শক্তি নাই? শেষ? আল্লাহ রব্বুল আলামিনের খেলা বুঝা খুব ভার।’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘যার কারণে বলব, ধনসম্পদ রেখে কোনো লাভ হবে না, বরং যার যা আছে, বিত্তশালী যারা আছেন আপনারাও (দরিদ্রদের) পাশে দাঁড়ান। আপনার পাড়া-প্রতিবেশী তারা কী অবস্থায় আছে সেটা আপনারা দেখেন। তাদের দিকে নজর দেন, সাহায্য করেন। সাহায্যই থাকবে, এটাই মানুষ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে মনে রাখবে।’
Leave a Reply