আলিফ আরিফা হক || গাজীপুর প্রতিনিধি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটূক্তি করার দায়ে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কৃত মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মেয়র জাহাঙ্গীর আলম খোলস ছেড়ে পুনরায় তৎপর হয়ে উঠেছেন।
গত শনিবার মহানগরীর কানাইয়া ও পরে নগরী কেন্দ্রে গাজীপুর ক্লাবে আয়োজিত জাহাঙ্গীর অনুগত কতিপয় গণমাধ্যম কর্মী ও আওয়ামী নেতাদের সাথে ইফতার পার্টিতে যোগ দেন।
সেখানে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার ঘেরাটোপে অবরুদ্ধ করার দায়ে তুমুল বিতর্কিত জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান সহ প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাও যোগ দেন। শনিবার বিকেলে কানাইয়া তাঁর নিজ গ্রামের লোকজন ও অনুগত গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে জাহাঙ্গীর আলম আত্মপক্ষ সমর্থন করে সাফাই বক্তব্য দেন। এই বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, এ সময় দেওয়া তাঁর বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সাময়িকভাবে তাঁর মেয়র পদ স্থগিত করা হয়েছে।
গত ৬ মাসেও তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে একটা লাউ, বাগুনও পায় নাই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করায় ও মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে জাহাঙ্গীর আলমের কথোপকথনের ধারণ করা একটি ভিডিও গত আগস্টের শেষ সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ প্রেক্ষিতে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাহাঙ্গীর আলমকে গত বছরের ১৯ নভেম্বর দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
এদিন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির এক বৈঠক শেষে তাকে আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান সে সময় এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলমের একটা বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে কিছুদিন আগে। সেখানে দেখা গেছে, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে জাহাঙ্গীর অশালীন বক্তব্য দিয়েছেন।
আমাদের চেতনার মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন। তার ওই বক্তব্য প্রচারের সঙ্গে সঙ্গেই আওয়ামী পরিবারসহ সর্বস্তরের মানুষ এর প্রতিবাদ করেছে। মিছিল করেছে। তাকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে। এ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান আরও বলেন, ‘এটা একেবারেই অমার্জনীয় অপরাধ। রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৪৭ ধারা অনুযায়ী তাকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।
এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের জন্য গাজীপুরের সর্বশ্রেণির মানুষ অভিনন্দন জানিয়েছে, দলীয় সভাপতির প্রতি এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘এটা তো সিদ্ধান্তই হয়েছে, বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব কিছুই করা হয়েছে।
আইনগতভাবে যদি কোনো কিছু থাকে, ফৌজদারি অপরাধ থাকে সেটা দেখবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় (সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ১৯ নভেম্বর ২০২১)। এরপর বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে জাহাঙ্গীর আলম এর মেয়র পদ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। সর্বশেষ অবস্থা পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা যায়, যেসব বিতর্কিত ভূমিকা পালনকারী দলীয় নেতা-কর্মী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটূক্তিকারী জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষ নিয়েছিলেন তাঁরাই আবার নতুন করে কোনও অরাজক ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার তৎপরতা শুরু করেছেন। ভিন্নচোখে একে ঘুরে দাঁড়ানোর অপচেষ্টা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক অঙ্গনের লোকজন। অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, গাজীপুরের জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে ইফতার মহফিল করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
Leave a Reply