আজ ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিবগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের ভূতুরে বিলে অতিষ্ঠ গ্রাহক-দৈনিক বাংলার নিউজ

স্টাফ রিপোর্টার
মোঃ কাওসার আলি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভুতুরে বিলে অতিষ্ঠ শিবগঞ্জ উপজেলাবাসী। উপজেলারাা প্রায় গ্রাহকের বিদুৎ বিলের কপিতে নিজের মনগড়া লাগামহীন বিল তৈরি নির্দিষ্ট সময়ে বিল পরিশোধ করতে বলেছে চঁাপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শিবগঞ্জ জোনাল অফিস। শনিবার সকালে লাগামহীন বিল দেখে অতিষ্ঠ হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপজেলাবাসী। অনেকে অতিরিক্ত বিল দেখে কানসাটে অবস্থিত শিবগঞ্জ জোনাল অফিসে গিয়ে বিলের কপি সংশোধন করছেন।
ভুতুড়ে বিলের কারণে গুণতে হচ্ছে প্রকৃত বিলের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ অতিরিক্ত টাকা। বিশেষ করে চলতি মাসের তৈরি ভূতুরে বিল নিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন উপজেলার হাজার হাজার গ্রাহক। অভিযোগ উঠেছে, মিটার রিডার বাড়ি বাড়ি না গিয়েই ইচ্ছে মতো রিডিং বসানোর কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে। এতে করে গ্রাহকদের অতিরিক্ত চার্জ গুণতে হচ্ছে। বিগত কয়েক মাসের তুলনায় মে মাসে হঠাৎ বিলের পরিমাণ দুই থেকে তিনগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রাহকদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিলের কপি হাতে পেয়ে গ্রাহকরা অভিযোগ জানালে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস আগামী মাসে সমন্বয় করা হবে বললেও এমন আশ্বাসে আস্থা রাখতে পারছেন না গ্রাহকরা। গ্রাহকদের মতে পল্লী বিদ্যুৎ একবার যে বিলের বোঝা গ্রাহকদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয় তা বিভিন্ন নিয়ম দেখিয়ে আদায় করেই ছাড়ে।
এদিকে, ভূতুরে বিল দেখে সামাজিত যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে সতর্কতা বার্তা নিয়ে কানসাট ইউনিয়নবাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে বেশ কয়েকটি আইডি থেকে। যা খাইরুল ইসলাম নামে একটি আইডি সহ বেশ কয়েকটি আইডিতে একই স্ট্যাটাস প্রকাশি হয়েছে।
মনাকষা,কানসাট, শ্যামপুর, মোবারকপুর, বিনোদপুর, দাইপুখুরিয়া, চককীর্ত্তি, শাহবাজপুরসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শিবগঞ্জ জোনাল অফিসের তৈরি করা লাগামহীম ভূতুরে বিলের তথ্য। যা পুরো উপজেলবাসীকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।
লাগামহীন এ ভুতুরে বিলের কারণে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে লাখ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিবগঞ্জ জোনাল অফিসের অধীনস্থ প্রায় ৭৭ হাজার গ্রাহক। যা প্রায় মিটিারের রিডারগণ দুই গুণ রিডিং বেশী লিখে বিল তৈরি করে গ্রাহকদের বাড়ি-বাড়ি পেৌঁছে দিয়েছে। জানা গেছে বর্তমানে আবাসিক ক্ষেত্রে ১-৭৫ ইউনিট পর্যন্ত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দর ধরা হয়েছে ৪ দশমিক ১৯ টাকা, ৭৫-২০০ ইউনিট পর্যন্ত ৫ দশমিক ৭২ টাকা, ২০১-৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ৬ টাকা। এভাবে ক্রমাগত ভাবে দর নির্ধারণ করে বিল তৈরি করছে শিবগঞ্জ জোনাল অফিস। লক্ষ্য করা গেছে, সাধারণ গ্রাহকদের পরিবারে সর্ব নিম্ন বিদ্যুৎ যদিও ব্যবহার করে তা ২৫/৩০ কিংবা ৩০/৩৫ ইউনিট। কিন্তু এসব পরিবারের মিটারগুলোর দুই গুণ বিল বাড়িয়ে দিয়ে বিল দিতে বাধ্য করছে শিবগঞ্জ জোনাল অফিস।
আজমল আলী নামে এক গ্রাহক গাণিতিক হিসাব করে জানান, আমার বাড়িতে প্রতি মাসে ৫০-৭৫ ইউনিটের মতো ব্যবহার হয়। কিন্তু এ মাসে আমার বিলের কপি ২৫০ ইউনিট উল্লেখ্য করে বিলের কপি দিয়েছে। অথচ আমার মিটারে ১০০ ইউনিট বেশি দেখেছে। এতে আমার অনেক টাকা জরিমানা দিতে হচ্ছে। শুধু আমার মিটারের ক্ষেত্রে নয়, আমার এলাকার প্রতি মিটারের একই অতিরিক্ত বিল তৈরি করেছে। এছাড়া তিনি আরো বলেন, আমি বিদ্যুৎ অফিস গিয়ে হয়তো বিল সংশোধন করে নিতে পারো। কিন্তু যারা সচেতন নয়, তাদের কি হবে। আমাদের এলাকা সাধারণ মানুষ এসব বুঝবে না। না বুঝেই বিল পরিশোধ অনেকে করেছেন। হয়তো আগামী মাসে আমাকে বা অন্যকে ৩৫ ইউনিটের বিল দিতে হচ্ছে। দেখা গেছে, ১-৭৫ ইউনিটের বিল পরের মাসগুলো সমন্বিত ভাবে আসলো কিন্তু মে মাসের বিলের আদায়কৃত টাকা কিভাবে সমন্বয় করবে? এখন লক্ষ্য করেন, আমি ২৫০ ইউনিটের বিল পরিশোধ করলাম ঠিক আছে। পরের মাসে বিল আসলো ৭৫ ইউনিট। প্রতি ইউনিট ৪ দশমিক ১৯ টাকা হারে ১-৭৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করলাম। আর পরবর্তীতে ৭৫-২০০ ইউনিট পর্যন্ত ৫ দশমিক ৭২ টাকা, ২০১-৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ৬ টাকা দিতে হচ্ছে। তাহলে আমার কাছ থেকে যে অর্থ আদায় করা হলো সে টাকা কি আমাকে আর ফেরত দিবে বিদ্যুৎ অফিস?
এব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শিবগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) প্রকৌশলী গোলাম সারওয়ার মুরশেদ জানান, জুন-জুলাই মাসকে সামনে রেখে আমাদের বিলগুলো তৈরি করতে তারিখ এগিয়ে নেয়া হয়। সে জন্য হয়তো কিছু কিছু মিটারের বিল ভুললে লেখা হয়েছে। এছাড়া অনেকের বয়েকা বিল থাকার জন্য তাদের বিলে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা ইচ্ছে করে বিলগুলো বৃদ্ধি করিনি। যাদের বিলের কপি বেশি বিল লেখা তা হয় তো ভূলবসত লেখা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, আপনারা সচেতন ব্যক্তি, আপনার জানামতে এবং আপনাদের আশপাশের যাদের বিল বেশি লেখা হয়েছে তাদের অফিসে পাঠানো জন্য অনুরোধ করছি। তাদের বিল সংশোধন করে দিবো।

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com