আজ ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রের শিকার-দৈনিক বাংলার নিউজ

নিজস্ব প্রতিবেদক বাহাউদ্দিন তালুকদার:

সম্প্রতি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন ট্রাস্টি বোর্ড মেম্বারকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। আশালয় হাউজিংয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি কেনার মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জনের নামে অভিযোগপত্র দাখিল করে। অভিযোগের বিষয়ে নোটিশ প্রাপ্ত হওয়ার পর আগাম জামিন চেয়ে এসব প্রবীণ ব্যক্তিবর্গ নিম্ন আদালতে না যেয়ে সুবিচারের আশায় হাইকোর্টে আবেদন করেন। সাধারণত হাইকোর্ট জামিন না দিলে কয়েকদিন সময় দিয়ে নিম্ন আদালতে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। অথচ এই ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বয়স এবং শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় না নিয়ে উনাদের জামিন আবেদন খারিজ করে সরাসরি পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এভাবে ৭০ – ৮০ বয়স্ক এবং অসুস্থ এক একজন ব্যক্তি কে জামিন না দিয়ে জেলহাজতে পাঠানোর কোনো নজির নেই। দেশের অন্যতম প্রবীণ এবং সম্মানিত ব্যবসায়ী ব্যক্তিবর্গ যারা নব্বইয়ের দশকে বিএনপি আমলের মতো একটি কঠিন সময়ে যখন মাত্র পাঁচটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, তখন সম্পূর্ণ নতুন ধারায়, নিজেদের সৎ উপার্জনের টাকায় বাংলাদেশের প্রথম প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে, সেরা সেরা মেধা সৃষ্টির মাধ্যমে আজকে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পাল্টে দিয়েছে , ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত করেছে, কূটনৈতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের হয়ে দেশের জন্য দেনদরবার করেছে, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অর্জনকারী আজকের টেক্সটাইল এবং গার্মেন্টস শিল্পের রূপরেখা তৈরি করেছে, ৭০ – ৮০ উর্ধ এমন সব ব্যক্তিবর্গকে কে বা কাদের শত্রুতার বলি হতে হল। বাংলাদেশের সমসাময়িক বেশ কিছু হাইপ্রোফাইল খুনের মামলার ক্ষেত্রেও পুলিশ বা আদালতের এমন কঠিন ব্যবহার দেখা যায়নি।

১৮ বছর সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যানপদে দায়িত্ব পালন করছেন আলমগীর কবির। তার স্বেচ্ছাচারিতা, হরিলুট, জালিয়াতি, ব্যাপক দুর্নীতি এবং বিপুল পরিমাণ অর্থপাচার’র এই ব্যাংকটিকে ঝুকিঁর দিকে নিয়ে যাওয়ার কারনে ৩০শে জুন ২০২১ প্রতিবাদ স্বরুপ ব্যাংকটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) বয়কট করেন ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং বর্তমান পরিচালক এমএ কাশেম এবং পরিচালক আজিম উদ্দিন আহমেদ ও রেহানা রহমান। আর এখান থেকেই সুত্রপাত হয় নর্থ সাউথের ট্রাস্টি বোর্ডের প্রভাবশালী এই তিন সদস্যেকে যে কোন মূল্যে অপরাধী প্রমান করে তাদের ব্যাংক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক পদ শূন্য করে দেয়ার চক্রান্তের। এমএ কাশেম, আজিম উদ্দিন আহমেদ ও রেহানা রহমান সভা বর্জন করায় তারা বুঝতে পারে এই ব্যক্তিরা বিপদের কারন হতে পারেন, এবং সেই বিপদ আঁচ করেই তাদের ব্যবসায়ীক ক্যারিয়ার সম্পূর্ণ রুপে ধ্বংস করতে দুর্নীতিবাজ আলমগীর কবিরের সহায়তায় এগিয়ে আসে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী চৌধুরী নাফিজ শরাফত, যিনি ব্যাংক খেয়ে ফেলা বা শেয়ার মার্কেট কারসাজি, এ জাতীয় কার্যকলাপের জন্যে বেশ সুপরিচিত। চৌধুরী নাফিজ শরাফত বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক যা প্রাক্তন ফারমার্স ব্যাংক এবং কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান।

দৈনিক পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলের অনলাইন সংস্করণ থেকে দেখা গেছে যে চৌধুরী নাফিজ শরাফত ও আলমগীর কবিরের যোগসাজশেই নর্থ সাউথ বিশ্ব বিদ্যলয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের এই সদস্যদের হয়রানী ও গ্রেফতার করা হয়েছে, নাফিজ স্বয়ং বা তার মনোনীত প্রতিনিধিরাই যেন সাউথ ইস্ট ব্যাংক ও নর্থ সাউথের পরিচালনা পর্ষদে স্থান করে নিতে পারেন তার জন্যেই এত আয়োজন।

নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম একজন ট্রাস্টি বোর্ড সদস্যের নাম মোঃ আব্দুল আউয়াল যিনি বিএনপির একনিষ্ঠ সমর্থক এবং ফাইন্যান্সিয়ার, তিনি এম এ আউয়াল নামে অধিক পরিচিত। অত্যন্ত একরোখা, মানুষের সাথে দুর্ব্যবহারকারী, অত্যন্ত ঝগড়াটে, অহংকারী স্বভাবের এই ব্যক্তির সাথে অন্যান্য ট্রাস্টি বোর্ড সদস্যদের কখনোই তেমন বনিবনা হতো না। বিশ্ববিদ্যালয়টির স্বাভাবিক পরিচালনায় জনাব আউয়াল বিভিন্নভাবে বাধা প্রদান করতেন। এমতাবস্থায় ট্রাস্টি বোর্ড আর কোনো উপায়ান্তর না দেখে উনাকে অপসারণ করে। একারণে জনাব আউয়ালের সকল ট্রাস্টি বোর্ড মেম্বারদের উপর বিশেষ আক্রোশ ছিল। সেই আক্রোশ থেকে উনি নিজেও চাচ্ছিলেন কিভাবে ট্রাস্টি সদস্যদের উচিত শিক্ষা দেওয়া যায়।

এবার আসি দুদকের দায়েরকৃত অভিযোগপত্র প্রসঙ্গে। চার্জশিটে সামারি শীটে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সদস্য পারটেক্স এর প্রতিষ্ঠাতা এম এ হাশেম এর নাম নেই অথচ ভেতরের পৃষ্ঠার প্রমানপত্রের উনার নাম এবং কার্যকলাপের বর্ণনা দেওয়া আছে। অন্যদিকে সামারি শীটে মোহাম্মদ শাহজাহান এর নাম আছে অথচ প্রমাণপত্রে উনার নামে কোন অভিযোগই নেই। এমনকি প্রমাণপত্রে রেহানা রহমান এর ক্ষেত্রে লেখা আছে যে উনি টাকা পেয়েছেন বলে অনুমিত হয়। এমন হাস্যকর অভিযোগপত্রের কথা কেউ কোনোদিন শুনেনি। নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ, এম এ কাশেম এবং বেনজীর আহমেদ সম্পর্কে যা লেখা আছে তা অত্যন্ত দুর্বল প্রমাণ। বোঝাই যাচ্ছে সম্মানিত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ কে ফাঁসানোর জন্য এই চার্জশিট তৈরি করা হয়েছে। পারটেক্সের জনাব এম এ হাশেম মারা গেছেন, কিন্তু প্রচুর টাকা নিয়েছেন বলে চার্জশিটের প্রমাণপত্রে উল্লেখ আছে পুরো এক পৃষ্ঠার বর্ণনায়। চার্জশিট অনুযায়ী এই টাকা এম এ হাশেম এর মৃত্যুর পর নিশ্চয়ই তার সন্তানদের কাছে আছে, অথচ সে টাকা উদ্ধারের ব্যাপারে দুদকের কোন কার্যকলাপ বা পরিকল্পনা দেখা গেল না। বর্তমানে জনাব এম এ হাশেম এর স্থানে তার জৈষ্ঠ পুত্র আজিজ আল কায়সার টিটো নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে আছেন। কই, তাকে তো ধরা হলো না বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো না যে সে টাকা কোথায় গেল।

সাউথইস্ট ব্যাংক জবর দখলকারী আলমগীর কবির, ব্যাংক এবং শেয়ার মার্কেট খেকো চৌধুরী নাফিজ শরাফত এবং বিএনপি’র অন্যতম সমর্থক এবং ফাইন্যান্সিয়ার মোঃ আব্দুল আউয়াল এর হিংসা – প্রতিহিংসার শিকার, ৭০ – ৮০ উর্ধ, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিপুল অবদান রাখা এসকল প্রবীণ এবং সমাজে বহুল সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের জামিন হওয়া তো দূরে থাক জেলহাজতে ডিভিশন পর্যন্ত হয়নি। উনারা যেন জামিন বা ডিভিশন কোন কিছুই না পান তার জন্য পদে পদে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং হচ্ছে।

আরো একটি কথা বলে রাখি, এই সকল ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা নিজেদের অর্থের বিনিময় ১৯৯১ সনে বাংলাদেশে বিএনপি আমলের মতো একটি কঠিন সময়ে, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে রীতিমতো যুদ্ধ করে, আমেরিকা থেকে কারিকুলাম ও শিক্ষক এনে, বিল্ডিং ভাড়া করে, নিজেরা চালিয়ে, আজকে যে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যেখান থেকে লক্ষ লক্ষ ছাত্র ছাত্রী আজকে তাদের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পেরেছে, নিজের পরিবারকে ভালো ভাবে রাখতে পারছে, দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে, এরা কি কেউ ট্রাস্টি বোর্ড মেম্বারদের এই ঋণ জীবনে কোনদিন শোধ করতে পারবে? আর কিছু অভিভাবক এবং ছাত্র ছাত্রী যারা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি নিয়ে, বড় বড় বিপদে পড়ে, ট্রাস্টি বোর্ডের মেম্বারদের মাধ্যমে সাহায্য নিয়ে, স্কলারশিপ নিয়ে, আজকে দেশে-বিদেশে ব্যবসা এবং চাকরি করে, ভালো ভাবে জীবন যাপন করছে, তাদের এবং তাদের পরিবারের আজ ভূমিকা কি?

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ