এসএম রুবেল ক্রাইম রিপোর্টার চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে:
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় একটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভেজাল ও মানহীন পশু খাদ্য তৈরি করছে। এসব খাদ্যে প্রয়োজনীয় উপকরণের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে মেয়াদ উর্ত্তীণ আটা, বালু ও সিরামিকসের ধুলা। পরে নামিদামি কোম্পানির সিল দেওয়া বস্তায় ভরে বাজারজাত করণ করা হচ্ছে। ফলে ভেজাল খাদ্য খেয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গবাদি পশু।
সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এ রকম অর্ধশতাধিক কারখানা থাকলেও তা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন!
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার আতাহার, নায়াগোলা, বালুগ্রাম, নয়ানগর, এরশাদনগর, দক্ষিন শহর এলাকায় অন্তত অর্ধশতাধিক গোডাউনে পশু খাদ্য তৈরির উপাদান ডিওআরবি ও রাইস ব্রানে মেশানো হচ্ছে সিরামিকসের ধুলা, বালু ও ডলোচুন। এসব অবৈধ গোডাউনে ভেজাল গো খাদ্য তৈরি করা হচ্ছে।
গরু খামারি আতাউর রহমান ও আব্দুল মান্নান অভিযোগ করে বলেন, ভেজাল ও মানহীন পশু খাদ্যে বাজার সয়লাব। নামিদামি কম্পানির প্যাকেটে ভরে বিক্রি করায় কোনটি আসল আর কোনটি নকল, তা চেনাই যায় না। অথচ এসব ভেজাল খাদ্যের প্যাকেটে লেখা দামেই কিনছেন তারা।
সোলায়মান আলী ও শফিকুল ইসলাম নামের দুই ব্যবসায়ী জানান, এলাকার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পশু খাদ্যে ভেজাল উপকরণ মেশাচ্ছেন। এভাবে তারা দ্বিগুণ লাভ করে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছেন। ফলে তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকা সৎ ব্যবসায়ীদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। ভেজাল ডিওআরবি ও রাইস ব্রানের পশু খাদ্যের প্রতিটি গাড়িতে (১৫ টনের ট্রাক) ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।
তারা আরো জানান, যেকোনো পশু খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন নিতে হয়। এ ছাড়া কারখানা স্থাপনে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ অন্যান্য দপ্তরেরও অনুমোদন লাগে। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা এসব নিয়ম-নীতি মানছেন না। তাদের কারণে এলাকার পশুসম্পদ ধ্বংসের মুখোমুখি হয়ে দাড়িয়েছেন।
অনুসন্ধানে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এই সিন্ডিকেটের অন্যতম মূলহোতা মেসার্স হিমেল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ওয়াহিদুজ্জামান হিমেলের বিশাল গোডাউনে গিয়ে পাওয়া গেছে ভয়াবহ চিত্র। সেখানে মাটি, ধুলাবালি ও বিভিন্ন আর্বজনা দিয়ে তৈরি হচ্ছে গো-খাদ্য। এভাবেই তিনি আয় করেছেন কোটি কোটি টাকা। আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। এখান থেকে অবৈধভাবে আয় করে বিনিয়োগ করছেন বিভিন্ন খাতে।
এবিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করে হিমেল টেডার্সের মালিক ওয়াহিদুজ্জামান হিমেল বলেন, আমি মিল মালিক নয়। এটি ভাড়া দেয়া হয়েছে। কিন্তু মিলে কর্মরত শ্রমিকরা বলছেন, হিমেলই মূল মালিক এবং তার নির্দ্দেশেই এসব অপকর্ম চলে।
স্থানীয়দের অভিযোগ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা না হওয়ার কারনে তারা দিনদুপুরে এমন অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। এব্যাপারে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাসুম আলী বলেন, বিষয়ে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভোক্তার সাথে এমন প্রতারণা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
এবিষয়ে প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তারা জানান, এসব ভেজাল খাবার খাওয়ানোর পর বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয় পশুরা। এতে তাদের স্বাস্থ্যহানি ঘটে। রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাও নষ্ট হয়ে যায়। ফলে বিভিন্ন রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। তাই ভেজাল পশু খাদ্য উৎপাদন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দারকার।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে এসব গোডাউনে অভিযান করা হবে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গো-খাদ্য পশুর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এসব গোডাউনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
Leave a Reply