নিজস্ব প্রতিবেদক : বাহাউদ্দিন তালুকদার
রাজধানীর মিরপুর হযরত শাহ আলী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তারের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের একটি মাত্র নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বা Circular এর মাধ্যমে একই ব্যক্তির তিনটি নিয়োগ অর্থাৎ সহকারী শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষক, বিদ্যালয়ের মার্কেট হতে বিশাল অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড এনে অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষা অধিদপ্তর, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে। হযরত শাহ আলী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারী অভিভাবকদের পক্ষে পাঁচ সদস্য যৌথ স্বাক্ষরে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে এ অভিযোগ করেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, ঢাকা মহানগর উত্তর সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত মিরপুর শাহ আলী থানার একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান “হযরত শাহ আলী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়”। মেয়েদের জন্য এটি একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিদ্যালয়ের জে.এস.সি এবং এস.এস.সি পরীক্ষার ফলাফল অত্যন্ত দুঃখ জনক। বিদ্যালয়টি চরমভাবে দুর্নীতিতে আক্রান্ত। দুর্নীতির অন্যতম কারণগুলি হচ্ছে গত ২১/০২/২০০২ ইং তারিখে “দৈনিক প্রথম আলো” পাত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অনৈতিকভাবে একজন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। ২০০২ সালে নার্গিস আক্তার অনেক আইন অমান্য করে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোন অভিজ্ঞতা ছাড়াই সরাসরি প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়।
বিদ্যালয়ের বিশাল অর্থ আত্মসাত : ২০০২ সালে এই অবৈধ ও ভূয়া প্রধান শিক্ষিকা নিয়োগ পাওয়ার পর, নিম্নলিখিত উপায়ে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাত করে আসছে। বিদ্যালয়ের একমাত্র খেলার মাঠের জমি ডেভেলপার কোম্পানীকে দিয়ে তিন তলা বিশিষ্ট মার্কেট নির্মাণ করা হয়। এই খেলার মাঠের জমির বিনিময়ে ডেভেলপার কোম্পানী সাইনমানি হিসাবে স্কুলকে যে টাকা দিয়েছিল, সাইন মানির পুরো টাকাই বিদ্যালয়ের তহবিলে (ফান্ডে) জমা না দিয়ে এই ভুয়া প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তার আত্মসাত করেছেন। সাইনমানি হিসাবে প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তরকে ১৬০০ স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাট দেয়া হয়। যে টাকার বিনিময়ে টেকনোপোল কনস্ট্রাকশন কোম্পানী নার্গিস আক্তারকে ১৬০০ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট দিয়ে থাকে। সেই ফ্ল্যাটের মূল্য বিদ্যালয়ের তহবিলে (ফান্ডে) জমা না দিয়ে আত্মসাত করেছেন। এই ফ্ল্যাটের ঠিকানা ৩৮/এ, রোড নং- ০৪, ৫-ই, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭ এবং মার্কেট নির্মাণ হওয়ার পর স্কুলের এলাকাভুক্ত জমিতে ৪৮০ টি দোকানের মধ্যে ৪১০টি দোকান বিক্রিয় করে সব টাকা আত্মসাত করেছেন। ২০১৯ এবং ২০২০ সালে মার্কেটের ২য় এবং ৩য় তলায় ৩৫টি দোকান নির্মাণ করেছে এবং প্রতিটি দোকান তিন লক্ষ (৩,০০,০০০/-) টাকা অগ্রিম নিয়ে ভাড়া দিয়েছে। ৩৫টি দোকানের মোট অগ্রিম টাকার পরিমাণ ৩,০০,০০০দ্ধ৩৫ = ১,০৫,০০,০০০/- (এক কোটি পাঁচ লক্ষ) টাকা। এক কোটি পাঁচ লক্ষ টাকা বিদ্যালয়ের তহবিলে বা ফান্ডে জমা না দিয়ে পুরো টাকা প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তার আত্মসাত করেছে। উপরে উল্লেখিত ৩৫টি দোকানের প্রতিটি দোকানের মাসিক ভাড়া ৮,০০০/- (আট হাজার) টাকা। এই ৩৫টি দোকান থেকে প্রতি মাসে ভাড়া আসে ৮,০০০০৩৫ = ২,৮০,০০০/- (দুই লক্ষ আশি হাজার) টাকা এবং এক বছরে আসে ২,৮০,০০০০১২ = ৩৩,৬০,০০০/- (তেত্রিশ লক্ষ ষাট হাজার) টাকা। এই পুরো টাকাই নার্গিস আক্তার আত্মসাত করে আসছে। মার্কেটের আন্ডার গ্রাউন্ড, ১ম, ২য় এবং ৩য় তলায় পুরাতন ৩৫টি দোকান অবস্থিত। প্রতিটি দোকানের মাসিক ভাড়া ৮,০০০/- (আট হাজার) টাকা। ৩৫টি দোকানের প্রতি মাসের ভাড়া ৮০০০০৩৫ = ২,৮০,০০০/- (দুই লক্ষ আশি হাজার) টাকা এবং এক বছরের ভাড়া ২,৮০,০০০×১২ = ৩৩,৬০,০০০ (তেত্রিশ লক্ষ ষাট হাজার) টাকা। এই টাকাগুলো অনেক বছর যাবত নার্গিস আক্তার আত্মসাত করে আসছে। ২০১২ এবং ২০১৩ সনে এই মার্কেটের ১০টি (দশ) দোকান বিক্রি করে দিয়েছে। প্রতিটি দোকানের বিক্রয় মূল ৬,০০,০০০/- টাকা। ১০টি দোকানের মোট বিক্রয়মূল্য ৬,০০,০০০×১০ = ৬০,০০,০০০/- (ঘাট লক্ষ) টাকা। এই ঘাট লক্ষ টাকা বিদ্যালয়ের তহবিলে জমা না দিয়ে পুরো ষাট লক্ষ টাকাই প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তার আহাসাত করেছে। তুরাগ নদীর পশ্চিমে সাভার থানার অন্তর্ভূক্ত কাউনদিয়া ইউনিয়নে ৫ (পাঁচ) কাঠা, ৭ (সাত) কাঠা পরিমাপের কয়েকটি প্লট আছে। তার প্রাইভেট গাড়ী নম্বর ঢাকা মেট্রো গ-২৯-০৩৭১, ২০২২ সনের ফেব্রুয়ারি মাস হতে বিদ্যালয়ের সামনে গেইটের উত্তর পাশে প্রায় ১৬ (ষোল) কাঠা জমির উপর ১০ (দশ) তলা বিল্ডিং নির্মাণ হচ্ছে। এই ডেভেলপার কোম্পানীর নাম এবং ঠিকানা নিম্নরূপ- টেকনোপোল কনস্ট্রাকশন কোম্পানীর নিকট থেকে সাইন মানি হিসাবে পাওয়া সমুদয় টাকা এই ভুয়া প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তার আত্মসাত করেছেন এবং বিদ্যালয় কর্তৃক বিল্ডিং এর প্রাপ্য অংশ বিক্রি করে সমস্ত টাকাও আত্মত্মসাত করেছেন। বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করা প্রয়োজন। তাই আসুন, দেখুন, তদন্ত করুন। অসহায় শিক্ষক, কর্মচারীদের অর্থ কিভাবে লুটপাট করে খাচ্ছে। প্রতি বছর বিদ্যালয়ে নিম্নমানের গাইড বই বুক লিস্টের অন্তর্ভুক্ত করে থাকে এবং ভা শিক্ষার্থীদের অনেক বেশী মূল্যে ঐ গাইড বই ক্রয় করতে বাধ্য করা হয়। নিম্নমানের গাইড বই প্রকাশ কোম্পানীর নিকট থেকে ১০,০০,০০০/- (দশ লক্ষ) টাকা আত্মসাত করে থাকে। এই প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তারের বাবার বাড়ি ছিল ভাঙ্গা টিনের ঘর। এখন তার বাবার বাড়ি জমিদার বাড়ি। এখন এই প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তার প্রায় শত কোটি টাকার মালিক। এছাড়াও অসহায় শিক্ষক কর্মচারীদের কোন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পায় না। বেতন, বোনাস, অবসর সুবিধা কোন কিছুই বৃদ্ধি পায় না। অসহায় শিক্ষক কর্মচারীরা খালি হাতে অবসরে চলে যান।
এবিষয়ে প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তার বলেন, এবিষয়ে আগেও অভিযোগ হয়েছে তদন্ত ও হয়েছে। তদন্ত করে প্রমাণ পেলে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।
Leave a Reply