আজ ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মিরপুরে প্রধান সড়কে বেপরোয়া ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা

 

বাহাউদ্দীন তালুকদার :
রাজধানীর মিরপুরে স্থানীয় সড়কগুলোর পাশাপাশি মূল সড়কেও বেপরোয়াভাবে চলছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। গাবতলী, দিয়া বাড়ি, মাজার রোড, টেকনিক্যাল, কল্যাণপুর, সরকারি বাংলা কলেজ, নবাবের বাগ, মিরপুর-১, ২, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, নম্বরের প্রধান সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না। কখনো অলিগলি বা শাখা সড়ক থেকে হুট করে উঠে আসছে মূল সড়কে। আবার নিয়মের তোয়াক্কা না করে সড়ক বিভাজকের ওপর দিয়ে পারাপার হচ্ছে রাস্তা। চলছে উল্টো পথেও। তবে শুধু মিরপুর নয়, রাজধানী ঢাকার প্রায় সব এলাকায় এখন অটোরিকশা চলাচলের এমন চিত্র নিত্যদিনের।

মূল সড়কে অটোরিকশার বেপরোয়া চলাচলে বিপদে পড়ছে দ্রুতগতির যানবাহনগুলো। এতে প্রতিদিনই ছোটখাট দুর্ঘটনাও ঘটছে। ট্রাফিক ও কমিউনিটি পুলিশের তৎপরতাও এসব অটোরিকশার খামখেয়ালিপনা থামাতে পারছে না।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মিরপুরের পল্লবী, ১১ নম্বর ও ১০ নম্বর মেট্রো স্টেশনের সিঁড়ি ও লিফটের সামনে অটোরিকশার ভিড়। আছে প্যাডেল চালিত রিকশাও। মেট্রো স্টেশন ঘিরেই সেখানে এসব রিকশার বাড়তি চাপ। অনেকে যেমন মেট্রো থেকে নেমেই উঠে যাচ্ছেন রিকশায় আবার অনেকে বিভিন্ন গন্তব্য থেকে মেট্রো স্টেশনে আসছেন এসব বাহনে। স্টেশনের গেটে রিকশার এমন জটলায় কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের।

মিরপুর ১০ নম্বর মেট্রো স্টেশনের নিচে কথা হয় মাসুদ রানা নামে এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, মেট্রো স্টেশন থেকে নেমে হাঁটার মত অবস্থা নেই। ফুটপাতে হকার; সড়কে অটোরিকশা মৌমাছির চাকের মত ঘিরে ধরে। রাস্তা পারাপারে বেশ কষ্ট হয়।

মিরপুর ১২ নম্বর ও পল্লবী স্টেশনের নিচেও দেখা যায় একই চিত্র। মিরপুর ১২ নম্বর মোড় থেকে শুরু হয়েছে তিনটি প্রধান সড়ক। যার একটি গেছে সুজাতনগর, একটি মিরপুর ডিওএইচএস আর অন্যটি সিরামিক হয়ে কালশীর দিকে। আবার একাধিক শাখা সড়ক মিশেছে এই সড়কগুলোতে।

একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মার্কেট ও খাবারের দোকান থাকায় মিরপুর ১২ নম্বর মোড়ে বাস, প্যাডেলচালিত ও ব্যাটারিচালক অটোরিকশার ভিড় লেগেই থাকে সবসময়। কখনো কখনো লেগে যায় যানজট। কোনো পদচারী সেতু না থাকায় এই মোড়ে যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই।

রিকশাচালক সোহেল রানা বলেন, এখন মোটর খুলে নিয়ে যায় ট্রাফিক পুলিশ। পরে আর ফেরত দেয় না। একটা মোটরের দাম ৪-৫ হাজার টাকা। এজন্য অনেকেই মূল সড়কে যান না। তবে যাত্রীদের অনেকে রিকশাচালকদের মূল সড়কে উঠতে উৎসাহিত করেন।

মিরপুর ১২ নম্বরের এক বাসিন্দা বলেন, সারাদিন অটোরিকশার জটলা লেগেই থাকে। রিকশা সরিয়ে বাসে উঠতে হয়, কিংবা মেট্রোতে যেতে হয়। সেখানকার বাস ও মোটরসাইকেল চালকেরা বলছেন, ধীরগতির এসব যানবাহনের কারণে মিরপুরের প্রধান সড়কটিতে হরহামেশা দুর্ঘটনা ঘটছে।

মোটরসাইকেল চালক মোজাহিদ বলেন, সবসময় উল্টো পথে আসে রিকশাগুলো। কোনো প্রকার সতর্কতা ছাড়াই শাখা সড়ক থেকে উঠে যায় মূল সড়কে। যেখানে সেখানে যাত্রী উঠাচ্ছে, নামাচ্ছে। মাঝেমধ্যেই মোটরসাইকেলের সঙ্গে এসব রিকশার দুর্ঘটনা ঘটছে। মূল সড়ক থেকে ধীরগতির যান তুলে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

তবে অটোরিকশা চালকদের অনেকের দাবি, কিছু অনভিজ্ঞ চালক আছেন, যারা এ কাজগুলো করেন। তারাই বেশি ভাড়ার লোভে মূল সড়কে উঠে যান। তাদের কারণে অন্য চালকদেরও অভিযোগের মুখে পড়তে হয়। এসব চালকের কারণে সাধারণ চালকদের মোটর ও রিকশা ডাম্পিংয়ে দেওয়া হচ্ছে।

রুহুল আমিন নামের একজন রিকশাচালক বলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দাম কম, আয়ও ভালো। ঢাকায় এসেই অনেকে রিকশা চালানো শুরু করে দেয়৷ অনেকেই বেশি টাকার জন্য বেপরোয়াভাবে চালায়৷ তারাই দুর্ঘটনা ঘটায়। ট্রাফিক পুলিশ মূল সড়কে রিকশা ধরা শুরু করলে একজন চালক অন্যদের সতর্ক করে দেয়। ফলে এসব যান ঠেকানো যায় না।

সরেজমিন ঘুরে ও কমিউনিটি পুলিশের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিরপুর এলাকায় দুই ধরনের রিকশা চলাচল করে, যার মধ্যে একটি ছোট ব্যাটারিচালিত রিকশা। যেগুলোতে ২-৩ জন বসতে পারে। আরেকটি বড় অটোরিকশা, যেগুলোতে ৫-৬ জন বসতে পারে। দিনের শুরুতে সাধারণত বড় অটোরিকশাগুলো মূল সড়কে উঠে না। তবে সন্ধ্যার পরই দুই ধরনের রিকশাই মূল সড়কে দাপিয়ে বেড়ায়।

কমিউনিটি পুলিশের সদস্য সাদাফ বলেন, আমরা তো উনাদের (রিকশাচালকদের) জরিমানা করি না৷ বারবার বুঝিয়ে বলি। তারপরও আমাদের ফাঁকি দিয়ে তারা উল্টো পথে এবং মূল সড়কে চলাচল করে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক মিরপুর বিভাগ অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে। গত সপ্তাহে প্রায় ১৬টি পয়েন্টে অভিযান পরিচালিত হয়েছে।

শতাধিক অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে ডাম্পিং ও ব্যাটারি জব্দসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের অভিযান মিরপুর ট্রাফিক বিভাগে অব্যাহত রয়েছে’- বলেন তিনি।

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com