শহিদুল ইসলাম
আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধ
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বারাংকুলা ও ফলিয়া গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে বারাশিয়া নদী সংলগ্ন অবস্থিত মীরগঞ্জ নীলকুঠি।
ফরিদপুর অঞ্চলের নীল চাষের প্রধান কার্যালয় ছিল মীরগঞ্জ।
১৮৩৩ সালের পরবর্তী সময়ে এই কুঠির আওতায় ৫২টি কুঠি ছিল। এখানে এক ইংরেজ সাহেবের সমাধী ও আছে। কুঠি ঘিরে এখানে গড়ে উঠেছিল একটি বিশাল বাজার।
ডানলপের নীলকুঠি, অভিশপ্ত কালের সাক্ষী।
দেখতে কিছুটা মঠ আকৃতির। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা এই চিমনী ও ধ্বংসস্তূপ জানান দিচ্ছে, ২০০ বছর আগের ইতিহাসের শোষণ করা এক করুণ ইতিহাস।
ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৭৫৭ সালের পলাশী যুদ্ধের কয়েক বছর পরে, বস্ত্র শিল্পে নীলের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়, ১৭৭৭ সালের পর বাংলায় আসেন নীলচাষের জন্য বেশ কয়েকজন নীলকর।
এর মধ্যে তৎকালীন বৃহত্তর ফরিদপুরের অংশ, বর্তমান মাদারীপুর জেলায় যায় ইংরেজ নীলকর ডানলপ।
সেখানকার মাটি নীল চাষের উপযোগী হওয়ায় ডানলপ তার বিশ্বস্ত হিন্দু জমিদার কালী প্রসাদের নামে, ১২ একর জায়গায় গড়ে তুলেন নীলকুঠি।
এসময় আশেপাশের কৃষকদের অমানুষিক নির্যাতনের মাধ্যমে বাধ্য করা হতো নীলচাষে।
এই অমানুষিক নির্যাতনের ফলে একসময় এই অঞ্চলের মানুষের মাঝে তৈরি হয় তীব্র ক্ষোভ।
যার ফলে ১৮৪৫ সালে ঐতিহাসিক ফরায়েজি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হাজী শরীয়তউল্লাহ্ ও তার ছেলে দুদু মিয়া, নির্যাতিত কৃষকদের নিয়ে গড়ে তুলেন শক্তিশালী লাঠিয়াল বাহিনী।
পরে ১৮৪৫ সালের ৫ ডিসেম্বর দুদু মিয়ার নেতৃত্বে তার লাঠিয়াল বাহিনী ও ডানলপের বাহিনীর সঙ্গে, ‘রণখোলা’ নামক স্থানে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়।
যুদ্ধে ডানলপ বাহিনীর পরাজয় হয়, পরে পালিয়ে আলফাডাঙ্গার বুড়াইছ ইউনিয়নের প্রধান কার্যালয় মীরগঞ্জে আসে ডানলপ।
সে সময় আলফাডাঙ্গার গোপালপুরের ‘কৃষক জাহেদ শেখ’ এর রামদার আঘাতে ঘোড়াসহ নিহত হয় তৎকালীন নীলকর ইংরেজ।৷
বর্তমানে নীল চাষ কৃষক নির্যাতনের ভয়াবহ ইতিহাসের সাক্ষী নীল কুঠিটির জায়গা সংরক্ষণের অভাবে বেদখল হয়ে গেছে। মীরগঞ্জের নীলকুঠি ও ধ্বংসের মুখে।
Leave a Reply