শহিদুল ইসলাম
আলফাডাঙ্গা( ফরিদপুর) প্রতিনিধি
তালগাছের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটছে। বাংলা ও বাঙালির জনপ্রিয় ফল তাল। ‘ভাদ্র মাসের তাল না খেলে কালে ছাড়ে না’ বলে প্রবাদও রয়েছে।
আর এই তাল গাছই এখন অন্য রকম উপকারে আসছে মানুষের। করছে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা।
বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে সারা দেশে রাস্তার দুই পাশে তালগাছের চারা-আঁটি রোপণের জন্য ২০১৭ সালে নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার প্রধান। এরপর কাবিখা-টিআর প্রকল্পের আওতায় তালগাছের চারা-আঁটি লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া, হয়েছে দেশে সবুজায়ন বৃদ্ধি করতে গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে, বর্ষা ও সারা বছরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করে আসছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো।
বিশেষজ্ঞারা বলছেন, তালগাছে কার্বনের স্তর বেশি থাকায় তা বজ্রপাত নিরোধে সহায়তা করে। তালগাছের বাকলে পুরু কার্বনের স্তর থাকে। তাল গাছের উচ্চতা ও গঠনগত দিক থেকেও বজ্রপাত নিরোধে সহায়ক।
বজ্রপাত শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের জন্য আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণের জন্য মানুষের ভাবনার অন্ত নেই।
আর ঘন সবুজে আবৃত বিস্তীর্ণ ধানখেত, মাঝখানে কর্দমাক্ত মেঠোপথ, তার দুই পাশে মাথা উঁচু তালগাছ আমাদের উপকূল ও গ্রামীণ জীবনের প্রতিচ্ছবি।
এমন সুন্দর ও নৈসর্গিক দৃশ্য এখন খুঁজে পাওয়া দুর্লভ।
তালগাছ স্বল্পতার কারণে বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না মানুষ ও পশুপাখি।আশ্রয় হিসেবে এ গাছ বাবুই পাখিদের বড়ই প্রিয় জায়গা। বাবুই ছাড়াও অঞ্জন, বাদুরসহ নানা প্রাণী আশ্রয় হিসেবে এ গাছটি বেছে নেয়।
দেশে তালগাছ প্রায় বিলুপ্ত হওয়ায়, মৃত্যুর ঘটনাও বাড়ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে মৃত্যু বরণ করেছে ২ হাজার ১৬৪ জন মানুষ। ২০১১ সালে ১৭৯ জন, ২০১২সালে ২০১ জন, ২০১৩ সালে ১৮৫ জন, ২০১৪ সালে ১৭০ জন, ২০১৫ সালে ১৬০ জন, ২০১৬ সালে ২০৫ জন, ২০১৭ সালে ৩০১ জন, ২০১৮ সালে ৩৫৯ জন, ২০১৯ সালে ১৬৮ জন ও ২০২০ সালে মৃত্যুবরণ করেছে ২৩৬ জন।
২০২১ সালে বজ্রপাতে অন্তত ৩৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এখন ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরে গড় মৃত্যুর হার ২১৬ জনের বেশি। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকাতে তাল গাছের বিকল্প নেই। সাধারণত একটি তালগাছ ৯০ থেকে ১০০ ফুট উঁচু হয়। উঁচু গাছ হওয়ায় বজ্রপাত সরাসরি এ গাছের মাধ্যমে মাটিতে চলে যায়।
এ ছাড়াও ভূমিক্ষয়, ভূমিধস, ভূগর্ভস্থ পানির মজুত বৃদ্ধি ও মাটির উর্বরতা রক্ষা করে। তালগাছের আকর্ষণে বাড়ে মেঘের ঘনঘটা; ঘটে বৃষ্টিপাতও। তালগাছের শিকড় মাটির অনেক নিচ পর্যন্ত প্রবেশ করায় ঝড়ে হেলে পড়ে না কিংবা ভেঙে পড়ে না। যেখানে কোনো কিছু চাষ হয় না সেখানেও তালগাছ তার শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়ে যায়।
পরিশেষে, তাল গাছ শুধু বজ্রপাতের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে না, বরং তাল গাছের নানান উপকারিতা রয়েছে। মানুষ বিভিন্নভাবে তাল গাছ দ্বারা উপকৃত হয়।
যেমন: তালপাতার পাটি, তালপাতার পাখা একদা ছিল জনপ্রিয়। তালের রস, তালের গুড়, তালের শাঁস দিয়ে সুস্বাদু মিষ্টি খাবার রান্না করা হয়। তাল দিয়ে ঐতিহ্যবাহী অনেক পিঠা তৈরি করা হয়। তালের গাছ ও পাতা ঘরের কাজে এবং জ্বালানি কাজে ব্যবহার করা হয়। তালের পাতায় সুন্দরভাবে বাসা তৈরি করে সেখানে পাখি বসবাস করে। তালগাছ মানুষ ও পাখি উভয়ের জন্যই উপকারী।
রাস্তার দুপাশে, পুকুর পাড়ে, বাড়ির আশপাশে, পরিত্যক্ত জায়গায় তালবীজ বপন করা যায়। সবাইকে সচেতন করে তালবীজ বপনে উদ্যোগী করে তুললে মানুষ সহ,পশুপাখি বিভিন্নভাবে উপকৃত হবে।,পরিকল্পিতভাবে রাস্তার দুই পাশে পুকুর পাড়ে ,তালগাছ রোপন করলে, নান্দনিক ও দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ উপভোগ করা যাবে।
Leave a Reply