আজ ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শান্তিময় বিশ্বের প্রতিধ্বনি-সামছুল আলম দুদু-এমপি

 

বার্তা প্রেরক: নিরেন দাস

এক বিশ্ব, এক পরিবার,এক ভবিষ্যৎ এই- স্লোগানটি মূলত গোটা বিশ্বকে ভেদাভেদ ভুলে ঐকমত্যে পৌঁছানোর উদাত্ত আহ্বান। অবশ্য এ ধরনের আহ্বান আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছিলেন জতিসংঘের সাধারণ পরিষদে। শান্তিময় বিশ্ব গড়ে তোলার যে আহ্বান শেখ হাসিনা রেখেছিলেন, তারই প্রতিধ্বনি উচ্চারিত হয়েছে সদ্য সমাপ্ত সম্মেলনে। এর কোনো সদস্য দেশ না হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমন্ত্রণ জানিয়ে যে মর্যাদা প্রদর্শন করেছেন, তাতে গোটা বাঙালি জাতি গর্বিত। সম্মেলন ৯-১০ সেপ্টেম্বর হলেও আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে যান ৮ সেপ্টেম্বর-২০২৩। এমনিতেই বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় বহমান। এ সম্পর্কের পেছনে রয়েছে ঐতিহাসিক অধ্যায়। সেটি কমবেশি সবাই জানেন। ১ কোটি শারণার্থী আশ্রয় দিয়ে তাদের খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করেছে, গোলাবারুদ-অস্ত্রশস্ত্র প্রশিক্ষণ তথা যুদ্ধের রসদ জুগিয়েছে; একই সঙ্গে ভারতীয় সেনারা আমাদের দামাল মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে। আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে ভারতের কূটনৈতিক তত্পড়তা ছিল উল্লেখ করার মতো। ঐতিহাসিক এ সত্যের ওপর ভর করে সম্পর্ক এগিয়ে চলেছে। যদিও স্বাধীনতার পর মাঝেমধ্যে ছন্দপতন ঘটেছে বাংলাদেশে পাকিস্তানি ভাবাদর্শে বিশ্বাসী সরকার ক্ষমতায় আসার কারণে। তবে টানা তিন দফা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাতে ঐতিহাসিক সূত্রটা কার্যকর রয়েছে। বিশেষত শেখ হাসিনা নরেন্দ্র মোদির শাসনকালে দুই দেশের প্রায় সব অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান হয়েছে। যেটুকু সমস্যা রয়েছে, তা অদূর ভবিষ্যতে সমাধান হয়ে যাবে।

শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেশ কয়েক দফা ভারত সফর করেন। সবশেষ ২০২২ সালে ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর ভারত সফর করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীও বেশ কয়েক বার বাংলাদেশ সফর করেন। এসব সফরের মধ্য দিয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যেও গভীর ঐক্য গড়ে ওঠে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গভীরতা উভয় নেতৃত্বের মধ্যেই দক্ষতা ও যোগ্যতার ছাপ লক্ষণীয়। উভয়ের দৃষ্টিভঙ্গি এক ও অভিন্ন, তা হচ্ছে মিলেমিশে চলা এবং সমৃদ্ধি অর্জন করা। বাংলাদেশ এবং ভারতের রাষ্ট্রীয় সমস্যাগুলো একই প্রকৃতির। সন্ত্রাস, মাদক চোরাকারবারি, জঙ্গিবাদ—এগুলো দমনে দুই দেশই ঐক্যদ্ধভাবে কাজ করে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। তার সুফল পাচ্ছে জনগণ। আজ সীমান্তে অস্ত্রের ঝনঝনানি নেই। দীর্ঘদিনের ঝুলে থাকা ছিটমহল সমস্যা দূর হয়েছে নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের গুণে। নাগরিক পরিচয়হীন জনগোষ্ঠীর ছিটমহলবাসী এখন নাগরিক পরিচয় দিতে পারছে। যাহোক, শেখ হাসিনার আগের যে কোনো সফরের তুলনায় এবারের সফর অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের স্বল্পতায় আলোচনার পরিধি ছিল খুবই ছোট। কিন্তু সম্মেলনের এক দিন আগে ৮ই সেপ্টেম্বর বিকেলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এ বৈঠকে দুই দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। তিনটি সমঝোতা স্মারকে সই হয়েছে। এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কৃষি গবেষণা ও শিক্ষা, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও দুই দেশের বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে মুদ্রা বিনিময়ের বিষয়ে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। বাংলাদেশের আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অতি সন্নিকটে। পক্ষান্তরে ভারতের জাতীয় নির্বাচনও ২০২৪ সালের এপ্রিল, মে-তে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সে পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশেই নির্বাচনি হাওয়া বইছে। দুই দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, নিরাপত্তাসহ সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে দুই নেতার মধ্যে। উভয় নেতৃত্বের পারস্পরিক ভাবনার কথা আলোচনায় স্থান পাওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার।

ভারতের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিরাপত্তা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময় ভারত নিরাপত্তা খাতে বাংলাদেশের কাছে থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা পেয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশকে ভারতবিরোধী তত্পরতায় ব্যবহার করার সুযোগ দেননি। এর বড় সুফল পেয়েছে আসামসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো। বাংলাদেশ ভারতের কানেকটিভিটি বাড়াতে হবে। দুই দেশের মানুষের মধ্যে সহজ যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতিকরণসহ নানা বিষয় শীর্ষ দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

এই সম্মেলনে শেখ হাসিনার যোগদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেনসহ বিশ্বনেতাদের সঙ্গে এক মঞ্চে মর্যাদার সঙ্গে বসার সুযোগ পেয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সম্মেলনে গ্লোবাল সাউথের পক্ষে অবিস্মরণীয় বক্তব্য রেখে নতুন ইতিহাসের জন্ম দিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মূলত গভীর সম্পর্কের কারণেই আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। জি-২০ সম্মেলনে আর একটি আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে অটিজম বিশেষজ্ঞ শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের অংশ গ্রহণ। একটি বৈশ্বিক সভায় সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের যোগদান সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম বিষয়ক ডব্লিউএইচও মহাপরিচালকের উপদেষ্টা এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা প্যানেলের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। সম্প্রতি তিনি দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়া অঞ্চলের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালক হিসেবে নির্বাচনেও দাঁড়িয়েছেন। তাকে সমর্থন করার জন্য এ অঞ্চলে ১১টি দেশের মধ্যে ভারত অন্যতম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালক হিসেবে সায়মা ওয়াজেদের জয় অনিবার্য। আন্তর্জাতিক ফোরামে অটিজম বিষয়ে তিনিও অসামান্য অবদান রেখে যাচ্ছেন। পরিশেষে বলতে চাই একটি সফল সফরের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা প্রমাণ করলেন তিনি সেবার দর্শনকেই ধারণ করে এগিয়ে চলেছেন। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কও এই দর্শনের ওপর ভিত্তি করেই স্থায়িত্ব লাভ করবে।

লেখক:রাজনীতিক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জয়পুুরহাট আসনের সাংসদ এ্যাড.সামছুল আলম দুদু-এমপি।

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com